ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৪
চলুন জেনে যাক পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৪। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে, পাসপোর্ট করতে কিভাবে আবেদন করতে হয, পাসপোর্ট করতে কত টাকা ফ্রি লাগে, পাসপোর্ট এর মেয়াদ এই সমস্ত বিষয়ে আজকের এই আলোচনা।
বাংলাদেশে ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তা অনেক মানুষ জানে না। বর্তমানে মানুষ পাসপোর্ট করতে গিয়ে এত হতাসায় ভুগে মনে হয় কারো বাপ মারা গেলেও এত চিন্তা করত না। আর কিছু দালাল (বাটবাপ) মানুষকে এমন ৬ আর ৯ বুজায় তখন মানুষ পাসপোর্ট নিজে নিজে করতে ভয় পায় আর অনেক বেশি টাকা দিতে বাধ্য হয় দালালদের। আজ আপনি যদি আমার লিখা গুলা মনোযোগ দিয়ে পড়েন তা হলে জীবনেও কোন দালালকে ১ টাকাও দিতে হবে না, আর আপনি নিজে নিজে আপনার পাসপোর্ট করতে পারবেন এবং নতুন ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তা আপনি আরো ৮-১০ জন মানুষকে বলে সাহায্য করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
পাসপোর্ট করতে নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন:
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- জন্মনিবন্ধন সনদপত্র
- নাগরিক সনদপত্র (যদি থাকে)
- ছবি (পাসপোর্ট সাইজের)
- আবেদনপত্র
জাতীয় পরিচয়পত্র
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার জন্য আপনার অবশ্যই একটি বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের মেয়াদ কমপক্ষে ৩ মাস থাকতে হবে।
জন্মনিবন্ধন সনদপত্র
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার জন্য আপনার অবশ্যই একটি বৈধ জন্মনিবন্ধন সনদপত্র থাকতে হবে। জন্মনিবন্ধন সনদপত্রের মেয়াদ কমপক্ষে ৩ মাস থাকতে হবে।
নাগরিক সনদপত্র
আপনি যদি বাংলাদেশী নাগরিক না হন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই একটি বৈধ নাগরিক সনদপত্র থাকতে হবে। নাগরিক সনদপত্রের মেয়াদ কমপক্ষে ৩ মাস থাকতে হবে।
ছবি (পাসপোর্ট সাইজের)
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার জন্য আপনার অবশ্যই দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে। ছবি অবশ্যই পাসপোর্টের আবেদনপত্রের নির্ধারিত স্থানে লাগাতে হবে।
আবেদনপত্র
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। আবেদনপত্রটি বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
পাসপোর্ট কিভাবে চেক করতে হয় দেখুন
বাচ্চাদের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
এবার জেনে নেওয়া জাক বাচ্চাদের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে। শিশুদের পাসপোর্ট আবেদন করতে অবশ্যই পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের কপি অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র প্রয়োজন হবে। যেহেতু শিশুর (২০ বছরের নিচে) ভোটার আইডি কার্ড নেই, সেহেতু অবশ্যই গার্ডিয়ানের ডকুমেন্টস প্রয়োজন।
তবে ১৮ বছরের উপরে যাদের ভোটার আইডি কার্ড আছে, তারা গার্ডিয়ানের ডকুমেন্টস ব্যতীত পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবে। সাধারণত তাদেরকে প্রাপ্তবয়স্ক ক্যাটাগরির মধ্যে বিবেচনা করা হয়।
- শিশুর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- গার্ডিয়ান হিসেবে পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
- অনলাইন আবেদন রেজিস্ট্রেশন ফরম
- অনলাইন আবেদনের কপি
- আবেদন ফি ব্যাংক ড্রাফ্ট করে এ চালানের কপি
- টিকা কার্ড (প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
- সম্প্রতি তোলা 3R Size এর ছবি
প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
সাধারণত যাদের ভোটার আইডি কার্ড আছে তাদেরকে প্রাপ্তবয়স্কদের তালিকায় ধরা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড প্রয়োজন হবে। তাছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে গার্ডিয়ানের ডকুমেন্টস প্রয়োজন নেই।
- জাতীয় পরিচয় পত্র তথা NID কার্ডের কপি
- ইউনিয়ন অথবা পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র
- অনলাইন আবেদন রেজিস্ট্রেশন ফরম
- অনলাইন আবেদনের কপি
- আবেদন ফি ব্যাংক ড্রাফ্ট করে এ চালানের কপি
- আবেদনকারী স্টুডেন্ট হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রাপ্ত স্টুডেন্ট কার্ড
- অথবা আবেদনকারী চাকরিজীবী হলে চাকরির কার্ড
- সম্প্রতি তোলা 3R Size এর ছবি
সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট আবেদনের করতে কি কি লাগে
সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকের থেকে (NOC ও GO) এই ২টি ডকুমেন্ট বেশি প্রয়োজন হবে। যারা রাষ্ট্রীয় কাজে সরকারি আদেশে দ্রুত দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট এর আবেদন করবে, তাদের ক্ষেত্রে GO (Government Order) প্রয়োজন।
এবং সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট এর আবেদন করলে, তার মন্ত্রণালয় কিংবা অভিদপ্তর থেকে NOC (No Objection Certificate) ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে। এই ডকুমেন্টগুলো ব্যতীত সরকারি চাকরিজীবীদের অন্য কোন ডকুমেন্টস প্রয়োজন নেই।
- আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ডের কপি
- নাগরিক সনদপত্র
- অনলাইনে আবেদন রেজিস্ট্রেশন ফরম
- আবেদনের পরে অনলাইন আবেদনের কপি
- ব্যাংক ড্রাফট এর রশিদ
- সম্প্রতি তোলা 3R Size এর ছবি
- NOC (No Objection Certificate)
- বা GO (Government Order)
পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া
পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া নিম্নরূপ:
- বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করুন।
- আবেদনপত্রটি পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করুন।
- আবেদনপত্রটি আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন।
- পাসপোর্ট অফিস আপনার আবেদনপত্রটি পরীক্ষা করে এবং অনুমোদন করলে আপনাকে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হবে।
- নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে আপনার আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিস এবং ছবি তুলুন।
- পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে আপনাকে একটি এসএমএস বা ইমেল পাঠানো হবে।
- পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণ (২১ কর্মদিবস) ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি (১০ কর্মদিবস) ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতীব জরুরি (২ কর্মদিবস) ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার ৭৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। সব ফির সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। ১৮ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী আবেদনকারীরা কেবলমাত্র ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পাবেন। অতি জরুরি আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন সঙ্গে আনতে হবে।
পাসপোর্টের মেয়াদ
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর কর্তৃক জারিকৃত ই-পাসপোর্টটি ৫ বছরের জন্য বৈধ। অর্থাৎ, এটি ইস্যু হওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নবায়ন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মেয়াদ উত্তীর্ণ পাসপোর্ট আর বৈধ থাকবে না এবং আপনি বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
আপনি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যেকোনো সময় নবায়নের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অপেক্ষা করলে আপনাকে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।
পাসপোর্ট নবায়নের জন্য কি করতে হবে?
পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন হবে:
- আসল ই-পাসপোর্ট
- ই-পাসপোর্টের ফটোকপি
- পাসপোর্ট নবায়ন ফি
- ৩টি পাসপোর্ট আকারের ছবি
- জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা নাগরিকত্ব সনদ
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- চাকরির নিয়োগপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- ব্যবসায়িক লাইসেন্স (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
যদি আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে, তাহলে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। মনে রাখবেন, দেরিতে নবায়নের জন্য আপনাকে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।